From the physical to spiritual aspects
পৃথিবীর গভীরতা হাজার হাজার বছর ধরে বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়কে ধাঁধায় ফেলেছে। বহু বছর ধরে কেবলমাত্র প্রাকৃতিক গহ্বরগুলিই আমাদের আয়ত্তের মধ্যে ছিল, যদিও তার মধ্যে অনেকগুলিই খুবই সাম্প্রতিককালে আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে বিংশ শতাব্দিতে আমূল পরিবর্তন ঘটে, যখন যন্ত্রের সাহায্যে আমরা পৃথিবীর গভীরে খনন করতে সক্ষম হই। কিন্ত ঠিক কতটা গভীরে আমরা পৌঁছতে পেরেছি ?
এই গ্যালারিটিতে আমরা পৃথিবীর গভীরতম প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট গহ্বরগুলি আপনার জন্য তুলে ধরেছি।
মেক্সিকোয় তামাউলিপাস-এর আলদামা-য় অবস্থিত এই প্রাকৃতিক গহ্বরটি। এটি El Zacatón নামে পরিচিত। এটি হল পৃথিবীর গভীরতম জলে-ভরা প্রাকৃতিক গহ্বর।
২০০৭ সালে নাসার অর্থব্যয়ে নির্মিত ডীপ ফ্রেয়াটিক থার্মাল এক্সপ্লোরার (DEPTHX) রোবট ১০০০ ফুটেরও বেশি (৩০০ মিটারেরও বেশি) গভীরতায় এর তলদেশে পৌঁছলে এর গভীরতা সকলের গোচর হয়।
অ্যান্টার্কটিকার আইসকিউব নিউট্রিনো মানমন্দিরর্টি ভূগর্ভস্থ ১.৫ মাইল (২.৪ কিমি) পর্যন্ত বিস্তারিত। এটি নিউট্রিনো (ভরবিহীন সাব-আ্যটমিক কণা)-র প্রমাণ হিসাবে চেরেন্ক্ভ রেডিয়েশন (আলো)-এর বরফের মধ্যে দিয়ে পথ অতিক্রমণ পর্যবেক্ষণ করার জন্য নির্মাণ করা হয়।
পর্যবেক্ষণাগারটি আমেরিকার এক বৈজ্ঞানিক গবেষণাকেন্দ্র আমুণ্ডসেন-স্কট সাউথ পোল স্টেশনে নির্মিত হয়।
রাশিয়ার মুরমানস্ক-এ কোলা সুপারডিপ বোরহোলটি খনন করা হয়েছিল ১৯৭০ থেকে শুরু করে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত। এটি ৭.৫ মাইল (১২ কিমি)-এর চেয়েও বেশি গভীর যা এটিকে বিশ্বের গভীরতম কৃত্রিম খনন করা গহ্বরের তকমা দিয়েছে।
কোলা সুপারডিপ গহ্বরটি পৃথিবীর ভুত্বকের অনেক গভীর অবধি বিস্তারিত। কিন্ত সেখানে তাপমাত্রা ৩৬৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)-এর থেকেও বেশি হওয়ার জন্য আরও গভীরে খনন করা সম্ভবপর হয়নি। শেষ অবধি এটি বন্ধ ও পরিত্যক্ত করে দেওয়া হয়।
চীন ২০২৩ সালে তারিম অববাহিকায় ৬.৯ মাইল (১১ কিমি) গভীর এক গহ্বর খনন করা শুরু করে।
এর লক্ষ্য ছিল তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান করা। তবে প্রাকৃতিক সম্পদ ছাড়াও বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে উপকৃত করা ছিল প্রকল্পটির অন্য উদ্দেশ্য।
Chikyū জাপানের একটি খননকারী জাহাজ। এর লক্ষ্য ছিল ইন্টিগ্রেটেড ওশান ড্রিলিং প্রকল্পের মাধ্যমে সমুদ্রের তলদেশের নীচের পরিবেশ নিয়ে অধ্যয়ন করা।
২০১২ সালে Chikyū সমুদ্রের নীচে খনন করে ২৫,৪০০ ফুট (৭,৭৪২ মিটার) গভীরে পৌঁছে এক নতুন গভীর-সমুদ্রের ড্রিলিং-এর রেকর্ড স্থাপন করে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কিম্বারলির দ্য বিগ হোল গহ্বরটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়নি বা যন্ত্র দ্বারাও এটিকে খনন করা হয়নি। এই চারপাশ খোলা এবং ভূগর্ভস্থ খনিটি আসলে হাত দিয়ে খনন করা হয়েছিল।
দুঃখের বিষয়, ১৮৮০ সালে এই হীরের খনিটি খননের কাজ চলাকালীন কয়েকশো আফ্রিকান শ্রমিক মারা যান। এই বড় গহ্বরটি ৪০ একরের বেশি অঞ্চল জুড়ে এবং ২,৬০০ ফুটের (৭৯২ মিটার) বেশি গভীরে বিস্তারিত।
প্রশান্ত মহাসাগরে গুয়াম-এর নিকটবর্তী মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের প্রায় ১২৪ মাইল (২০০ কিমি) পূর্বে অবস্থিত মারিয়ানা ট্রেঞ্চ আমাদের গ্রহের সমস্ত মহাসাগরের মধ্যে গভীরতম স্থান।
মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরতা প্রায় ৬.৮ মাইল (১১ কিমি.)-এর থেকেও বেশি। এর মধ্যেকার তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস)-এর নীচে চলে যায় এবং যার জন্য এটি একটি অত্যন্ত শীতল স্থানে পরিণত হয়েছে। আবার এখানে প্রায় ভূপৃষ্ঠের বায়ুমন্ডলীয় চাপের তুলনায় ১০০০ গুণ বেশি চাপ অনুভূত হয়।
Xiaozhai Tiankeng, হেভেনলি পিট বা স্বর্গীয় গহ্বর নামেও পরিচিত। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম এবং গভীরতম প্রাকৃতিক গহ্বর যা ২ হাজার ফুট (৬৭০ মিটার) গভীর।
বিশ্বাস করা হয় যে Xiaozhai Tiankeng ১২৮,০০০ বছর ধরে গঠিত হয়েছিল।
১৯৬১ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত আমেরিকার সরকার প্রশান্ত মহাসাগরে একটি গহ্বর খনন করা শুরু করে। "Phase I" নামে পরিচিত এই গহ্বরটি মেক্সিকোয় গুয়াদালাপ দ্বীপের উপকুলে অবস্থিত।
এর লক্ষ্য ছিল Mohorovičić discontinuity ওরফে মোহো (পৃথিবীর ভূত্বক এবং ম্যান্টেল আবরণের মধ্যে সীমানা) বিচ্ছিনতায় পৌঁছানো। Phase I চলাকালীন খননকারীরা সমুদ্রের তলদেশের নীচে ৬০০ ফুট (১৮৩ মিটার) গভীরে পৌঁছেছিলেন।
দুঃখের বিষয়, পরবর্তী পর্যায়গুলি আর এগোয়নি (চিত্রে প্রস্তাবিত ড্রিলিং প্ল্যাটফর্মের একটি মডেল দেখা যাচ্ছে)। যদিও তারা কখনোই মোহো বিচ্ছিন্নতায় পৌঁছায়নি, কিন্তু প্রকল্পটি ভূত্বকের কিছু অংশের বয়স নির্ধারণে সক্ষম হয়েছিল।
ইংল্যান্ডের উডিংডিয়ান শহরে উডিংডিয়ান জলের কুয়োটি ১৮৫৮ থেকে ১৮৬২ সাল পর্যন্ত হাত দিয়ে খনন করা হয়েছিল।
এটির গভীরতা ১,২৮৫ ফুট (৩৯১ মিটার), যা আজকের মান অনুসারে খুব বেশি কিছু না, কিন্তু সেই সময়ের নিরিখে অনেকটাই গভীর।
Kontinentales Tiefbohrprogramm der Bundesrepublik Deutschland ওরফে জার্মান কন্টিনেন্টাল ডীপ ড্রিলিং প্রোগাম অথবা কে টি বি বোরহোল ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪-এর মধ্যে খনন করা হয়েছিল।
এর লক্ষ্য ছিল মহাদেশীয় ভূত্বকের বিষয়ে চর্চা করা। মূল গহ্বরটি (২টি গহ্বর আছে এখানে) ৫.৬ মাইল (৯ কিমি) গভীর। KTB বোরহোল এখনও পর্যন্ত বিশ্বের গভীরতম কৃত্রিমভাবে খনন করা গহ্বর যা এখনও চালু আছে।
ওকলাহোমার আনাদারকো অববাহিকাটিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডারের সন্ধানে ১৯৭৪ সালে বার্থা রজার্স গহ্বরটি খনন করা হয়েছিল।
প্রায় ৬ মাইল (৯.৭ কিমি) গভীরে বিস্তারিত এই গহ্বরটি এখনও অবধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গভীরতম কৃত্রিমভাবে খনন করা গহ্বর হিসাবে চিহ্নিত হয়।
জর্জিয়ার ভেরিওভ্কিনা গুহার গভীরতা ১.৩ মাইল (২ কিমি)-এরও বেশি, এটি পৃথিবীর গভীরতম গুহা হিসাবে পরিচিত ।
এটি "এভারেস্ট অফ দ্য ডীপ" নামেও পরিচিত। ২০১৮ সালে মানুষ প্রথম ভেরিওভ্কিনা গুহার তলদেশে পৌঁছায়।
সূত্র: (Grunge) (WatchMojo) (ZME Science)
পৃথিবীর গভীরতম গহ্বরগুলি
প্রাকৃতিক গহ্বর থেকে কৃত্রিমভাবে খনন করা গহ্বর
LIFESTYLE গভীরতা
পৃথিবীর গভীরতা হাজার হাজার বছর ধরে বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়কে ধাঁধায় ফেলেছে। বহু বছর ধরে কেবলমাত্র প্রাকৃতিক গহ্বরগুলিই আমাদের আয়ত্তের মধ্যে ছিল, যদিও তার মধ্যে অনেকগুলিই খুবই সাম্প্রতিককালে আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে বিংশ শতাব্দিতে আমূল পরিবর্তন ঘটে যখন যন্ত্রের সাহায্যে আমরা পৃথিবীর গভীরে খনন করতে সক্ষম হই। কিন্ত ঠিক কতটা গভীরে আমরা পৌঁছতে পেরেছি ?
এই গ্যালারিটিতে আমরা পৃথিবীর গভীরতম প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট গহ্বরগুলি আপনার জন্য তুলে ধরেছি।