পাকস্থলীর ক্যান্সার উপসর্গ, সতর্কতা এবং চিকিৎসা -

আপনি কি জানেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছরে নতুন ক্যান্সার আক্রান্তের মধ্যে ১.৫% মানুষ পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন? বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং প্রায় ৮০০,০০০ মানুষ মারা যাচ্ছেন। পাকস্থলীর ক্যান্সার বিশ্বের বাকি পাঁচটি ক্যান্সারের মধ্যে অন্যতম একটি এবং এতে মহিলাদের তুলনায় পুরুষেরা বেশি আক্রান্ত হন। এই ক্যান্সারের কারণ ও উপসর্গগুলি কী কী? কীভাবে এই রোগের চিকিৎসা করা যেতে পারে?

পাকস্থলীর ক্যান্সার সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন।

© Shutterstock

পাকস্থলীর ক্যান্সার কী? -

পাকস্থলীর ক্যান্সার এক ধরনের ক্যান্সার যা পাকস্থলীর আবরণী কলা থেকে সৃষ্টি হয়।

© Shutterstock 

পাকস্থলীর ক্যান্সারের উপসর্গ বা লক্ষণ -

পাকস্থলীর ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হল বুক জ্বালা করা বা অম্বল হওয়া।

© Shutterstock 

খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া -

খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া এই রোগের আরেকটি প্রাথমিক লক্ষণ, একে ডিসফেজিয়া বলে।

© Shutterstock 

অসুস্থতা অনুভব করা -

অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা বোধ করা অতি সাধারণ হলেও, কখনো কখনো তা গুরুতর রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে। বমি বমি ভাব হল পাকস্থলীর ক্যান্সারের আর এক সম্ভাব্য লক্ষণ, বমির সঙ্গে রক্ত বেরোলে তা একটি অতি গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

© Shutterstock 

হজমের সমস্যা -

নিয়মিত হজমের সমস্যা, খালি ঢেঁকুর তোলা এবং অল্প খাবার খেলেই পেট ভর্তি হয়ে যাওয়া সম্ভাব্য বিপদের লক্ষণ হতে পারে।

© Shutterstock 

খিদে কমে যাওয়া -

খিদে কমে যাওয়া বা অল্প খাবার খেলেই পেট ভর্তি হয়ে যাওয়া, কোনোরকম চেষ্টা না করেও ওজন কমে যাওয়া হল এর প্রাথমিক লক্ষণ।

© Shutterstock 

পেটে ব্যথা -

পেটের উপরের অংশে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব করা পাকস্থলীর ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এছাড়া পেটের উপর দিকে টিউমার দেখা দিলে তা সবসময় পরীক্ষা করে দেখা উচিত।

© Shutterstock 

ক্লান্তি অনুভব করা -

রক্তে কম লোহিত রক্তকণিকা (অ্যানিমিয়া) থাকার ফলে নিয়মিত দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভব করার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে-- এর মানে হল কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। এছাড়া কোনো ভাইরাস ঘটিত ইনফেকশন বা আলসার হলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই সমস্যাগুলির অবনতি হতে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

© Shutterstock 

কাদের ঝুঁকি বেশি? -

যে কেউ পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন, তবে পঞ্চাশোর্ধ পুরুষদের ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত হয়ার সম্ভাবনা বেশি। ম্যাসাচুসেটস্‌ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষকদের এক অধ্যয়ন অনুযায়ী পুরুষ আর মহিলার মধ্যের মৌলিক জৈব তারতম্য এর কারণ।

© Shutterstock 

হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (এইচ পাইলোরি) -

হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (এইচ পাইলোরি) নামক ব্যাক্টোরিয়াম অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাকস্থলীর ক্যান্সারের জন্য দায়ী। 

© Shutterstock 

দীর্ঘস্থায়ী পেটের সমস্যা -

আপাতদৃষ্টিতে সম্পর্কহীন অ্যাসিডিটি-সহ পেটের বিভিন্ন রোগ পাকস্থলীর ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। 

© Shutterstock 

গ্যাস্ট্রাইটিস -

পাকস্থলীর ক্ষয়ক্ষতির কারণে এর গাত্র-প্রদাহ হলে গ্যাস্ট্রাইটিস হয়। এটি ফেলে রেখে দিলে পরের দিকে ক্যান্সারের সম্ভাবনা দেখা যায়।

© Shutterstock 

বংশগত কারণে এই রোগ হতে পারে -

যদি আপনার ভাই, বোন, বা বাবা-মায়ের মধ্যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে আপনার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি।

© Shutterstock 

কীভাবে এই রোগের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে? -

পাকস্থলীর ক্যান্সার সম্পূর্ণ নির্মূল করা যায় না। কিন্তু সঠিক সময় এই রোগ নির্ধারণ করা গেলে এর ঝুঁকি অনেকটা কমানো যেতে পারে। ধূমপান যেকোনো সমস্যার কারণ। তাই এই অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।

© Shutterstock 

ওজন হ্রাস -

ওজন কমান, মেদ ঝরান। ওজন কম রাখতে পারলে ক্যান্সার সমেত অনেক রোগ ঠেকানো সম্ভব।

© Shutterstock 

নোনতা খাবার কম খান -

লবণ ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে, বিশেষত পাকস্থলীর ক্যান্সারের। আমেরিকান ইন্সিটিউট অফ ক্যান্সার রিসার্চ (AICR)-এর গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার পাকস্থলীর আবরণী কোষকে নষ্ট করে দেয়। তাই সোডিয়াম ক্লোরাইড জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

© Shutterstock 

মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন -

মদ্যপান থেকে বিরত থাকলে সব ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো যায়। মদ্যপান, তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন আর অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

© Shutterstock 

টাটকা শাকসবজি ও ফল -

প্রতিদিন অন্তত পাঁচ ধরনের টাটকা শাকসবজি ও ফল খাওয়ার অভ্যাস, যা পাকস্থলীর স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। 

© Shutterstock 

রেড মিট -

রেড মিট যেমন পাঁঠার মাংস, এমনকী গরু, ভেড়ার মাংস, প্যাকেট জাতীয় খাবার থেকে তৈরি হ্যাম, বেকন, সালামি এইসব খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

© Shutterstock 

পাকস্থলীর ক্যান্সার নির্ণয়ের পরীক্ষা -

আপনাকে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের কাছে পাঠানো হবে যিনি পেটের সমস্যা-সহ পাকস্থলীর ক্যান্সার নিশ্চিত করার জন্য গ্যাস্ট্রোস্কোপি (এক ধরনের এন্ডোস্কোপি) করবেন।

© Shutterstock 

বায়োপ্সি -

এন্ডোস্কোপ নামক চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি ছোট ক্যামেরার মাধ্যমে শরীরের ভেতরের সমস্ত কিছুর নজর রাখা যায়। যদি কোনো কিছুু অস্বাভাবিক নজরে আসে, তাহলে বায়োপ্সির  সাহায্যে কোষের অল্প কিছু নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে সেটিকে বিশ্লেষণ করে দেখা হয়।

© Shutterstock

ক্যান্সার পজিটিভের পরীক্ষা -

প্রারম্ভিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ক্যান্সার চিকিৎসার বেশ কিছু সুযোগ আছে । তবে বলাই বাহুল্য, চিকিৎসাপদ্ধতি বেশ কষ্টদায়ক। রোগ ছড়িয়ে পড়তে থাকলে চিকিৎসকরা পরবর্তী পর্যায়ের পরীক্ষানিরীক্ষাগুলি করতে পরামর্শ দেন, যেটিকে স্ট্যাজিং বলে।

© Shutterstock 

আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান -

পাকস্থলীর ভেতর ক্যান্সার কতটা দানা বেঁধেছে এবং অন্য কোনো অঙ্গও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা সেটা জানতে আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করানো হয়।

© Shutterstock 

চিকিৎসাপদ্ধতি -

যদি আপনার পাকস্থলীর ক্যান্সার ধরা পড়ে, তাহলে বিশেষজ্ঞের দল আপনাকে এ-বিষয়ে পরামর্শে দেবেন। পাকস্থলীর ক্যান্সার অনেকক্ষেত্রেই সেরে উঠে যদিও এর চিকিৎসার পদ্ধতিটি জটিল।

© Shutterstock 

কেমোথেরাপি -

ক্যান্সারের প্রধান চিকিৎসা হল সার্জারি এবং কেমোথেরাপি। যখন কেমোথেরাপির ওষুধ কাজ করে না তখন টার্গেটেড ড্রাগ থেরাপির ব্যবহার করা হয় ।

© Shutterstock 

ইমিউনোথেরাপি -

ইমিউনোথেরাপি হল এক ধরনের চিকিৎসা, যা পাকস্থলীর ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে। এই ইমিউনোথেরাপিতে ওষুধের ব্যবহার করা হয় যা মানুষের নিজস্ব ইমিউন সিস্টেমের সাহায্যে ক্যান্সারের কোষ খুঁজে বার করে ধ্বংস করে।

© Shutterstock 

রেডিওথেরাপি -

কেমোথেরাপির সাথে রেডিওথেরাপি ক্যান্সার কোষগুলিকে নষ্ট করে ক্যান্সারের ফিরে আসা প্রতিহত করে। এই ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি চরম পর্যায়ের ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।

© Shutterstock 

সুস্থ হওয়ার হার -

রোগটি বিস্তারের পরিধি অনুযায়ী, এই রোগের চিকিৎসার ব্যাপারটি নির্ভর করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই দেশের মানুষদের শেষ পাঁচ বছরে ধরা পড়া ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে যাঁদের চিকিৎসা রোগটি পাকস্থলীর বাইরে ছড়িয়ে পড়ার আগে ধরা পড়েছে, তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আর, যেক্ষেত্রে রোগটি আক্রান্ত-স্থানের পার্শ্ববর্তী কোষ বা অঙ্গ-প্রতঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে সেক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার হার ৩২ শতাংশ। তবে, যেক্ষেত্রে রোগটি যদি আক্রান্ত-স্থান থেকে অনেক দূরের অংশে ছড়িয়ে যায়, সেক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার হার মাত্র ৬ শতাংশ। আনুমানিক, ৩৬ শতাংশ মানুষের চিকিৎসা পরবর্তী পর্যায়েই শুরু হয়।

© Shutterstock 

পাকস্থলীর ক্যান্সার -

একটি জিনিস আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, পাকস্থলীর ক্যান্সার থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার এই হার পুরোটাই আনুমানিক। একটি রোগীর জীবনযাত্রা এবং সার্বিক শারীরিক অবস্থার উপর তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেকটাই নির্ভর করে। এছাড়াও নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সুস্থ হয়ে ওঠার হারটি চিকিৎসা শুরুর বয়সের উপরও নির্ভরশীল। বয়স বাড়তে থাকলে রোগটি থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কমতে থাকে।

সুত্র: (ক্যান্সার স্ট্যাটিস্টিক সেন্টার) (দি লান্সেট) (এম আই টি নিউজ) (ক্যান্সার রিসার্চ, ইউ কে) (এ আই সি আর) (ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ক্যান্সার) (আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি) (ক্যান্সার ডট নেট) 

© Shutterstock