প্রথম ছবি 'হোয়াট ইটিং গিলবার্ট গ্রেপ' থেকে শুরু করে বহু প্রতীক্ষিত অস্কারজয়ী সিনেমা 'দি রিভিন্যান্ট' পর্যন্ত, প্রায় পঁচিশ বছরের বেশি সময় ধরে হলিউডের এক প্রধান অবলম্বন হিসেবে কাজ করেছেন লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও। রোমিও, জ্যাক ডসন, জ্যে গাট্সব্যে, জর্ডন বেলফোর্ট, কব, ফ্রাঙ্ক অ্যাবাগ্নালে, হিউ গ্লাস এবং অন্যান্য অনেক নামেই তিনি অতি-পরিচিত এবং ভালোবাসার মানুষ। অগণিত এই ভূমিকা ছাড়াও, ডি ক্যাপ্রিও অনন্য এক পথপ্রদর্শক ।
তাঁর প্রায় ২৬০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ইউ এস ডলারের সম্পত্তি, ডি ক্যাপ্রিও নিশ্চিতভাবেই ভালভাবে তা খরচ করেন। 'দি ট্রাভেল' এর থেকে প্রাপ্ত তালিকার উপর ভিত্তি করে, যে যে আকষর্নীয় উপায়ে তিনি তাঁর এই বিশাল সম্পত্তি খরচ করেন, সেটি এই গ্যালারি থেকে দেখে নেওয়া যাক।
২০১৯ সালের ২৫শে আগস্ট, প্রকৃতিতে অবদানের উদ্যোগ হিসেবে ডি ক্যাপ্রিও 'আর্থ অ্যালায়েন্স'-এর ঘোষণা করেন যা তাঁর একটি পরিবেশবান্ধব উদ্দ্যোগ, যার থেকে তিনি 'আমাজন ফরেস্ট ফান্ড'-এর মাধ্যমে আমাজন অগ্নিকাণ্ডের জন্য পাঁচ মিলিয়ন ইউ এস ডলার দান করেন।
ডি ক্যাপ্রিও তাঁর সুন্দর কিছু সময় কাটান তাঁর অনন্য পোষ্য Sulcata কচ্ছপের সাথে। এই প্রাণীগুলি প্রায় ৮০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
ফিস্কার অটোমোটিভ কোম্পানিটি দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত লিও এই কোম্পানির একজন বড় ফ্যান ছিলেন এবং ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে এখানে বিনিয়োগ করেন। তিনি ফরমুলা ই রেসে যুক্ত ছিলেন এবং টয়োটা প্রিয়াস ও টেসলা রোডস্টার ড্রাইভও করেন।
অভিনেতার প্রথম গাড়িটি ছিল ১৯৬৯ সালের এক ফোর্ড মাস্তাং। তিনি জানান গাড়িটি অনেকবার খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
তারকা হওয়ার মতোই সিনেমার একজন বড় ভক্ত ডি ক্যাপ্রিও। অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স জাদুঘরের জন্য 'দি উইজার্ড অব্ ওজ'-এর আইকনিক ঝলমল করা জুতো কিনতে সাহায্য করেছিলেন, ঐতিহাসিক এই কিংবদন্তিটিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে।
২০১০ সালে হাইতি দেশটির ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে টাকা তোলার জন্য অভিনেতা এক লাখ ইউ এস ডলার বোনোর গিটারের পিছনে খরচ করেন একটি দাতব্য নিলাম অনুষ্ঠানে।
রিয়েল এস্টেট ব্যবসাতেও ডি ক্যাপ্রিও এক চমকপ্রদ ব্যবসায়িক পদক্ষেপ নেন যা তাঁর পোর্টফোলিওকে উন্নীত করে। জানা যায় চার মাসের মধ্যে তিনটি সম্পত্তিতে প্রায় তেইশ মিলিয়ন ইউ এস ডলার খরচ করেন।
বিশালাকার গেস্ট হাউস, আটটি বাথরুম, ছয়টি বেড্রুম, টেনিস কোর্ট, স্পা ও আধুনিক ওয়েসিস-সহ পুলবিশিষ্ট ক্যালিফোর্নিয়ার পাম স্প্রিঙে দিনা শোর-এর পূর্বতন বাসভবনের জন্য প্রায় ৫.২৩ মিলিয়ন ইউ এস ডলার খরচ করেন।
এছাড়াও অভিনেতা সামগ্রিকভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে নিউ ইয়র্কের গ্রীনউইচ গ্রামের ডেলোস বিল্ডিং-এ দশ মিলিয়ন ইউ এস ডলার দিয়ে বিশালাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন। এর মধ্যে ইন-ডাক্ট অ্যারোমাথেরাপির মতো কাটিং এজ হেলথ প্রযুক্তি এবং সাইবেরিয়ান ওক কাঠের তৈরি মেঝের একটি অনন্য ঘর ছিল যা দেহের সঠিক ভঙ্গি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
অ্যাপার্টমেন্টটিতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ঝরনাও ছিল যেটি ট্যাপের জলের ক্লোরিনকে প্রশমন করে এবং পরিবর্তে শরীরে বেঁচে থাকার জন্য পুষ্টিকর উপাদান ও আ্যন্টি অক্সিডেন্ট বাড়িয়ে তোলে যেটি ত্বক, চুল ও নখকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে।
৮ মিলিয়ন ইউ এস ডলারে তিনি নিউ ইয়র্কের ব্যাটারি পার্কে একটি বাড়ি কেনেন।
ডি ক্যাপ্রিও সমুদ্রতীরেও এমন একটি বিশালাকার বাড়ি কেনেন যা এমনকী বার্বির জন্য কেবলমাত্র স্বপ্নেই সম্ভব হতে পারে।
হ্যাঁ, ডি ক্যাপ্রিও 'স্টার ওয়ার'-এর মূর্তির সংগ্রহেও বিনিয়োগ করেছিলেন। এক্ষেত্রে জানা গেছে যে তিনি দেড়শোর উপর ফ্রাঞ্চাইজির আ্যকশান ফিগার সংগ্রহ করার সাথে সাথে ২০০টি খেলনা স্পেস রোবট এবং ২০০টি সুপারহিরো সংগ্রহ করেছিলেন।
লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও-র এক অন্যতম অমূল্য সম্পদ ছিল Jean-Michel Basquiat-এর এক বিরল কোলাজ যার নাম 'রেড ম্যান ওয়ান'। তিনি এটিকে ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনেছিলেন। কিন্তু এটিকে পরে এফ বি আই-এর হাতে দিয়ে দিতে বাধ্য হন। কারণ হিসাবে জানা গেছিল যে এটিকে কিনতে যে টাকা ব্যবহার করা হয় তা এসেছিল ওঁর রেড গ্রানাইট প্রোডাকশান কোম্পানি থেকে, যার সম্বন্ধে মালেশিয়ার রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি 1MDB থেকে অবৈধ ধনরাশি নেওয়া হয়েছে বলে বিস্তর অভিযোগ শোনা যায়।
প্রতিটি রোলের জন্য যিনি আট অঙ্কের উপার্জন করেন তাঁর কাছে ডিজনি ওয়ার্ল্ডে গিয়ে নিজের ভিতরের শিশুটিকে জাগিয়ে তুলতে কয়েক হাজার ডলার খরচা করা কিছুই না, তার জন্য তাঁর আলাদা করে সঞ্চয় করারও দরকার নেই।
লিও-র কিন্তু একটি অন্যদিকও আছে। ডিজনি রিসর্টের একজন লাইফগার্ড দাবি করেছিলেন যে যুবক ক্যাপ্রিও মাদকাসক্ত হয়ে জামাকাপড় পরে পুলে গিয়ে নামার আগে ওয়াটার স্লাইডের উপর প্রস্রাব করেছিলেন এবং পরে স্লাইডে নেমেও প্রস্রাব করেন। এই সাংঘাতিক ব্যাপারটি চাপা দেওয়াতে নিশ্চয় কিছু টাকার গল্প ছিল।
২০০৫ সালে ডি ক্যাপ্রিও বেলিজের উপকূলে ১.৭৫ মিলিয়ন ইউ এস ডলারে একটি দ্বীপ ক্রয় করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন যে তিনি এখানে 'Blackdore Caye' নামের একটি ইকো-রিসর্ট বানানোর পরিকল্পনা করেছেন যেটি পুরোপুরিই পুনঃনবীকরণ শক্তি দ্বারা চালিত হবে এবং দ্বীপ ও তার সংলগ্ন জলরাশির জীবজগতের স্বাস্থ্যের উন্নতিও ঘটাবে।
তাঁর মডেল গার্লফেন্ড-সহ বিভিন্ন সেলিব্রিটি P. Diddy, Zac Efron, Tobey Maguire এবং আরও অনেকের সঙ্গে সামনের সারিতে বসে বাস্কেটবল খেলা দেখতে তাঁকে বহুবার দেখা গেছে।
ডি ক্যাপ্রিও মাঝে মাঝেই এবং বিতর্কিতভাবে দেখা দিয়েছেন বিশাল (এবং প্রচুর ব্যয়বহুল) জাহাজের মাথায় যেখানে অনেকেই "আমি পৃথিবীর রাজা" তাঁর এই চিৎকার শোনার অপেক্ষাতে থাকতেন। তিনি এগুলি কেনার পরিবর্তে ভাড়া নিতেন, একবার বন্ধুদের সাথে শুধু বিশ্বকাপ দেখার জন্য ৬৭৮ মিলিয়ন ইউ এস ডলার দামের বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ইয়ট ভাড়া নিয়েছিলেন।
ডি ক্যাপ্রিও একবার এক ডাইনোসরাসের খুলির জন্য বিড জমা দেন এবং নিকোলাস কেজের কাছে হেরে যান। কিন্তু তিনি মোসাসাউরাস অ্যাকোয়াটিক লিজার্ডের খুলি ক্রয় করেন যার দাম প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ইউ এস ডলারের মতো। যেটা তিনি ২০০৮ সালে রাসেল ক্রো-কে বিক্রি করে দেন, যেটা আবার তিনিও ২০১৮ সালে নিলাম করে দিয়েছিলেন।
সফল অভিনেতা এবং প্রযোজক ডি ক্যাপ্রিও 'দি উলফ অব্ ওয়াল স্ট্রিট'-এর মতো ছবিতে অন স্ক্রিন এবং অফ স্ক্রিন উভয় জায়গাতেই কাজ করেছেন। ২০১৮ সালে লিজ নাগেন্ট-এর উপন্যাস 'আনর্যাভেলিং অলিভার'-এর মুভি স্বত্ব কিনে নেন।
তাঁর ক্রিয়াকর্ম ও স্বাস্থ্য সচল রাখার উদ্দেশ্যে, লিও অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এবং পরিবেশের পক্ষে কম ক্ষতিকারক বৈদ্যুতিন সিগারেট বা ভেপিং খেতেন।
সেলিব্রিটিদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বয়স হতে থাকলে এটা খুব সাধারণ ব্যাপার যে, তাঁরা তাঁদের চোখদুটিকে এক জোড়া কালো কাচে ঢাকবেন, কিন্তু ডি ক্যাপ্রিও এরকম কোনো নির্দিষ্ট একজোড়াতে আবদ্ধ থাকতেন না। তাঁর এগুলি সংগ্রহের এক ভাণদার ছিল এবং সেগুলির কোনোটাই প্রদর্শন করতে তিনি ভয় পেতেন না।
হাতঘড়িকে মাঝে মাঝে ধনসম্পত্তি, ক্ষমতা ও অবস্থানের প্রতীক হিসেবে ধরা হয় এবং ডি ক্যাপ্রিও-র কব্জির পরিধানও সেটাই প্রমাণ করে। ট্যাগ হিউয়ারের ২,৬০০ ইউ এস ডলারের থেকে শুরু করে ক্যারেরা ক্যালিব্রির ৪,৫০০ ডলার পর্যন্ত দামি ঘড়ি তিনি পরেছেন।
ডি ক্যাপ্রিও এক দুর্দান্ত আর্ট কালেকশন গড়ে তোলার জন্যে পেইন্টিং-এর পিছনে বছরভর লক্ষাধিক খরচ করেন এবং তাঁর কালেকশন সত্যিই গর্ব করার মতো।
তাঁর শিল্পকলা বিষয়ে আগ্রহ এক কদম এগিয়ে যায়, যখন তিনি ম্যাগনাস আর্ট অ্যাপটিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। যখন আপনি কোনো ছবি তোলেন তখন এটি শিল্পের তথ্যের হদিশ দেয়।
পরিবেশবান্ধব বিষয়ে প্রশ্নচিহ্ন (যেরকম তাঁর ইয়ট ব্যবহার) রেখে বলা যায়, ডি ক্যাপ্রিও ব্যাক্তিগত প্লেনে ওড়ার জন্য পরিচিত ছিলেন, যেটি প্রচুর পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ করে।
ডি ক্যাপ্রিও এবং তাঁর কোটিপতি বন্ধু স্টেয়ার্ট রার দুজনে মিলে, ডলি উইলসন-এর বাদ্যযন্ত্র, যা দিয়ে তিনি বিখ্যাত গান 'অ্যাজ টাইমস গোজ বাই'-তে পিয়ানো বাজিয়েছিলেন, ৬ লাখ ইউ এস ডলারের বিডে নিলামে কিনেছিলেন। আবার দু-বছর পরে তা নিলামে ওঠে এবং ৩৪ লাখ ডলারে এবার বিক্রি হয়।
ক্যামেরার কাজের বাইরে, ডি ক্যাপ্রিও সম্ভবত সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত ছিলেন তাঁর দানশীল কাজের জন্য যেগুলি পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, আদিবাসী জীবন ও বনভূমি সংরক্ষণ সম্পর্কিত।
তিনি একজন উঁচু মানের প্রযোজক, ২০১৬ সালের ডক্যুমেন্টারি 'বিফোর দি ফ্লাড'-এ প্রচুর টাকা ব্যয় করেন যেটিতে তিনি আয়োজক ছিলেন।
লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও যে উপায়ে তাঁর মিলিয়ন ডলার সম্পত্তি খরচ করেন
ডাইনোসরাসের খুলি থেকে মুভির স্বত্ব
CELEBRITY Actors
প্রথম ছবি 'হোয়াট ইটিং গিলবার্ট গ্রেপ' থেকে শুরু করে বহু প্রতীক্ষিত অস্কারজয়ী সিনেমা 'দি রিভিন্যান্ট' পর্যন্ত, প্রায় পঁচিশ বছরের বেশি সময় ধরে হলিউডের এক প্রধান অবলম্বন হিসেবে কাজ করেছেন লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও। রোমিও, জ্যাক ডসন, জ্যে গাট্সব্যে, জর্ডন বেলফোর্ট, কব, ফ্রাঙ্ক অ্যাবাগ্নালে, হিউ গ্লাস এবং অন্যান্য অনেক নামেই তিনি অতি-পরিচিত এবং ভালোবাসার মানুষ । অগণিত এই ভূমিকা ছাড়াও, ডি ক্যাপ্রিও অনন্য এক পথপ্রদর্শক ।
তাঁর প্রায় ২৬০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ইউ এস ডলারের সম্পত্তি, ডি ক্যাপ্রিও নিশ্চিতভাবেই ভালোভাবে তা খরচ করেন। 'দি ট্রাভেল'-এর থেকে প্রাপ্ত তালিকার উপর ভিত্তি করে যে যে আকষর্ণীয় উপায়ে তিনি তাঁর এই বিশাল সম্পত্তি খরচ করেন সেটি এই গ্যালারি থেকে দেখে নেওয়া যাক।